শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন গাজী টায়ার কারখানায় লুটপাট চালান কাহিনা এলাকার বাসিন্দা হাসান মিয়া।
লুট করা সেই মালামাল অন্যত্র বিক্রি করে দেন তিনি। গত ২৫ আগস্ট গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তারের পর ফের কারখানাটিতে লুটপাট করতে যান হাসান মিয়া। এ সময় কারখানায় আগুন লেগে গেলে ভেতরে আটকে পড়ে নিখোঁজ হন হাসান মিয়া।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন রূপগঞ্জের গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে লুটপাট চালান কাহিনা এলাকার বাসিন্দা হাসান মিয়া। লুট করা সেই মালামাল অন্যত্র বিক্রি করে দেন তিনি। পরে ২৫ আগস্ট ফের ফ্যাক্টরিটিতে লুটপাট করতে যান। এ সময় সেখানে আগুন লেগে ভেতরে আটকে পড়ে নিখোঁজ হন হাসান আলী।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও ফায়ার সার্ভিসের কাছে হাসান আলীর মতো ১৭৬ জন নিখোঁজের নাম-ঠিকানা দিয়েছে স্বজনরা।
গাজী টায়ার কারখানার স্বত্বাধিকারী আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন গত ৫ আগস্ট কারখানায় লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। গত রোববার (২৫ আগস্ট) ভোররাতে একটি হত্যা মামলায় রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার একটি বাসা থেকে গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ খবরের পরই গত রবিবার বিকেলের দিকে তিন-চার শতাধিক লোক আবারও লাঠিসোঁটা নিয়ে রূপসী গাজী টায়ার কারখানার ভেতরে ঢুকে পড়ে। চনপাড়া থেকে একটি গ্রুপ লুটপাটের উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গাজী টায়ার কারখানায় প্রবেশ করে লুটপাট চালায়।
পরে অপর একটি গ্রুপ বরাবো ও খাদুন এলাকা থেকে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে লুটপাট চালাতে যায়। এ সময় রূপগঞ্জসহ আশপাশের এলাকা থেকে সাধারণ মানুষও মালামাল লুট করতে কারখানায় প্রবেশ করে। লুটপাট নিয়ে একপর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হন। বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পুরো টায়ার কারখানায় ব্যাপক লুটপাট চলে।
রাত ১০টার দিকে একটি পক্ষ গাজী টায়ারের ছয়তলা ভবনটির নিচতলায় আগুন দিয়ে নিচে গেটে তালাবদ্ধ করে রেখে চলে যায়। একপর্যায়ে আগুনের লেলিহান শিখা ৬০ থেকে ৮০ ফুট উঁচু হয়। ভবনের ভেতরে আটকা পড়া অনেকেই স্বজনদের ফোন করে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানায় বলে বেশ কয়েকজন স্বজন দাবি করেছেন।
রূপসী কলাবাগান এলাকার জোসনা বেগম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমার স্বামী শেখ ফরিদ গত ৫ আগস্ট এই ফ্যাক্টরী থেকে টায়ার আইনা বন্ধুগো লগে বিক্রি করছিলো। ২৫ তারিখও বন্ধুগো লগে গেছিলো রূপসী কারখানায় টায়ার আনতে। রাত ৯টার দিকে আমার স্বামী শেখ ফরিদ আমারে কল দিয়া কইছিলো আমরা ৬ তলা বিল্ডিংয়ের ভিতরে আটকাই আছি।
নিখোঁজ মিল্লাতের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার বলেন, গাজীর এই কারখানা কালকে রাতে আইছিলো মালামাল নিতে। কেডায় কইবো আমার স্বামীরে এতো লোভ করতে। লোভের লাইগাই আইজকা আমি তার কোন খোঁজ পাইতাছি না। আমার এক ছেলে ও এক মেয়েরে অহন কেডা দেখবো। আমাগো বাড়ি বরিশাল কিন্তু আমরা বরপা এলাকায় ভাড়া থাকি।
এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কাছে ১৭৬ জন নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা দিয়েছেন স্বজনরা। বেশির ভাগ নিখোঁজের বাড়ি উপজেলার মিকুলী, রূপসী কাজিপাড়া, ছাতিয়ান, মুগরাকুল, কাহিনা, বরপা, মাসাবো, তারাব, বরাবো, চনপাড়া, মুড়াপাড়াসহ আশপাশের এলাকায়।
আগুন দেখতে উৎসুক জনতাকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ও কারখানার বাইরে ভিড় করতে দেখা যায়। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দীর্ঘ ১০ কিলোটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসা-যাওয়া করতেও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এদিকে পানি স্বল্পতার কারণেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হয়।