টাকার বিনিময়ে পরিচয় গোপন রেখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন বাংলাদেশের অনেক ‘প্রভাবশালী’। এক্ষেত্রে অনেকে সফল হলেও ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বুধবার (২১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার পতনের পর তার সরকারের প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেশ ছাড়ার অনুমতি দিচ্ছে না সরকার।
এমন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এসব ‘প্রভাবশালী’ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ সুযোগে উভয় দেশে গড়ে উঠেছে একাধিক চক্র। তারা ৫০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে এসব ‘প্রভাবশালীকে’ নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আর্থিক সঙ্গতি এবং সামাজিক পরিচিতি বুঝেই টাকা চাওয়া এবং নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আনন্দবাজার উল্লেখ করেছে, ফোনে কলকাতার এক চক্রের কাছে মেহেরপুর থেকে এক সংসদ সদস্য তার স্ত্রী ও ৪ সন্তানকে নিয়ে ভারতে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ চান।
মিনিট পাঁচেকের কথোপকথন শেষে চূড়ান্ত হয় তাদের রফাদফা। এসময় ওই সংসদ সদস্যকে চক্রটি জানিয়ে দেয়, সপরিবারে ভারত যেতে মাথাপিছু ১ লাখ রূপি করে খরচ পড়বে। এছাড়া বিএসএফ ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নজর এড়িয়ে ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ থাকতে দিতে হবে মাসিক ১০ লাখ রূপি!
দর কষাকষির পর ওই সংসদ সদস্যের পরিবারকে সীমান্ত পার করতে মাথাপিছু ৭০ হাজার টাকায় রাজি হয় চক্রটি আর আশ্রয়ের জন্য মাসিক ৫ লাখ টাকা। এরপরই গত সোমবার রাতে মেহেরপুর সদর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছান ওই এমপি।
আনন্দবাজার জানায়, পালিয়ে যাওয়া ওই সংসদ সদস্য বাংলাদেশে নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মইনুদ্দিন ও পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে হয়ে যান দেবাংশু। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার সপরিবারে ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার ‘অপারেশন’ সফলও হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের কাথুলিবাজার এলাকার শেখ নাজিম (ছদ্মনাম) নামে চক্রের একজন বলেন, ‘আমরা এসব এলাকা হাতের তালুর মতো চিনি। কোথায় কাঁটাতার আছে, কোথায় নেই, সব মুখস্থ। কোথায় পাচারকারী কাঁটাতার কেটে রেখেছে, সেটাও জানি।’ তার কথায়, ‘এই বর্ষায় ভৈরব নদী টইটম্বুর। নদী পুরো খোলা। এ দেশ থেকে যারা ও দেশে (ভারতে) যেতে চাইছে, পরিচিত আর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে শুধু সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছি আমরা। বাকি দায়িত্ব ওদের।’’
এ পারের দেবাংশু নামে চক্রের আরেক সদস্য বলেন, ‘কাঁটাতার পার হয়ে আমাদের চাষের জমি আছে। রোজ যাতায়াত করি। ও দিক থেকে বেশ কয়েকজন পরিচিত, আত্মীয়-স্বজনরা ভারতে আসার জন্য মোটা টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা শুধু পার করে এখানে নিয়ে এসেছি।
রাখার দায়িত্ব আমাদের নয়। সেটা দেখে অন্য লোক।’ বিএসএফ ও পুলিশের নজর তারা কীভাবে এড়াচ্ছে এমন প্রশ্নে দেবাংশু বলেন, ‘বিএসএফ এখন খুব সজাগ। সেটা ঠিক। তবে গ্রামে আমাদের সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক। তাই কাউকে আশ্রয় দিয়েছি জানলে কেউ মুখ খুলবে না।’
এদিকে অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিএসএফ। সিন্ডিকেট চক্রের উপস্থিতি টের পেয়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় টহল জোরদার করেছে বাহিনীটি। বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি একে আর্য বলেন, ‘পড়শি দেশের অশান্ত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় টহল কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের সঙ্গে জনসংযোগ বৃদ্ধি করেছি আমরা। অনুপ্রবেশের সব রকম খবর রাখার চেষ্টায় বিএসএফ। বেশ কয়েকটি অবৈধ অনুপ্রবেশ আটকেও দিয়েছেন জওয়ানেরা। গ্রেফতার হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবে সীমান্ত এলাকায় এই মুহূর্তে কোনও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির খবর নেই।’’ অবৈধ অনুপ্রবেশ আটকাতে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি) কতটা সক্রিয়?
বিজিবির উপ-মহাপরিচালক (যোগাযোগ) কর্নেল শফিউল আলম পারভেজ বলেন, ‘যারা রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনি এবং অন্যায় কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তিনি জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। বাংলাদেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ও দেশে যাতে কোনো ভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় না পায়, তার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাবেন।