25 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024

প্রধান উপদেষ্টার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে যা লিখলেন মাহফুজ আনাম

জনরোষে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ২১ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে।

বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তেই তার সুনাম রয়েছে এবং তার ভাবমূর্তি খুব উজ্জ্বল। প্রধান উপদেষ্টার হাতকে শক্তিশালী করে কীভাবে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা যেতে পারে সেই বিষয়ে কলাম লিখেছেন ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম।

প্রকাশিত তার কলামটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

সত্যি বলতে, আমরা গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সুশাসন, সরকারি সংস্থার জবাবদিহিতা, করপোরেট সুশাসন, সৎ নেতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের মতো বিষয়ে পুরোপুরি আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। সামনে ছিল কেবল চাটুকারিতা আর দুর্নীতি। আমাদের কাছে বিকল্প ছিল শুধুই তাদের পদলেহন, নয়তো তাদের পকেট ভরতে সহায়তা করা।

শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে সেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে, যা অবিশ্বাস্য। যে দরজাগুলো শুধু চাটুকারদের জন্য খোলা ছিল, সেগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে এই ছাত্র-জনতা। হঠাৎ করেই আবার আমরা বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছি, স্বপ্ন দেখছি।

আরও পড়ুনঃ  দুর্যোগের দিনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে মানা ঢাবি ভিসির

তবে স্বপ্ন যেমন সুন্দর, তেমন ভঙ্গুরও বটে। এমন কিছু ঘটনা ঘটছে, যা আমাদের স্বপ্ন পূরণের পথকে বন্ধুর করে তুলছে। এমন কিছু ঘটনা ঘটছে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে অহেতুক প্রশ্ন জাগাচ্ছে এবং তাদের সক্ষমতা নিয়ে দ্বিধা তৈরি করছে। সিস্টেমের ভেতরে ও বাইরে উভয় জায়গা থেকেই এটা হচ্ছে।

শুরুতেই সিস্টেমের ভেতরের পুলিশের কথায় আসা যাক। সদ্য সাবেক সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ও গণধিকৃত করার ক্ষেত্রে যেসব সরকারি সংস্থার ভূমিকা রয়েছে, তার মধ্যে সর্বগ্রে আসবে পুলিশের নাম। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় বাহিনী হিসেবে পুলিশকে ব্যবহার করেছে।

আরও পড়ুনঃ  ক্ষমতায় থেকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে হাসিনা : প্রধান উপদেষ্টা

পরবর্তীতে গল্পের ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত হয়ে নিজস্ব স্বার্থ সিদ্ধিতে মশগুল হয়ে পড়ে এই বাহিনী। আগের মতোই নতুন শাসকদের অধীনেও তাদের আচরণ অপরিবর্তিত রয়েছে, এখনো তারা আইনের অপব্যবহার করে যাচ্ছে।

একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক কর্মী দুই সাংবাদিককে বিমানবন্দর থেকে আটক করে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে সোপর্দ করা হয়। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। যদিও তারা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ ছিলেন না—তবুও, আমরা জানতে চাই, কোন আইনটি তারা ভঙ্গ করেছেন? কীভাবে তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হলো? তাদের নাম হত্যা মামলার এফআইআরে ছিল না।

অজ্ঞাত আসামিদের স্থলে তাদের নাম যোগ করা হলো। এই অজ্ঞাত আসামির নামে মামলা এবং সেখানে পরবর্তীতে কারও নাম যোগ করে দেওয়া একটি চর্চা, যা শিগগিরই বাতিল করা উচিত। তদন্ত চলাকালীন অজ্ঞাত আসামিদের জায়গায় যেকোনো সময়, যে কাউকে পুলিশ অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এই দুই সাংবাদিক ক্ষমতাচ্যুত শাসকদের বড় সমর্থক হয়ে থাকলেও কোনো প্রচলিত আইন ভঙ্গ করেননি। তাদের সাংবাদিকতার সমালোচনা বা ক্ষমতাচ্যুত শাসকদের সঙ্গে যোগসাজশের বিস্তারিত উন্মোচন করা যেতে পারতো। কিন্তু আইন ভঙ্গের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই কারাবন্দি করা উচিত নয়।

আরও পড়ুনঃ  হাতিরঝিল থেকে সাংবাদিক রাহানুমার মরদেহ উদ্ধার

গণমাধ্যম অফিস বা টেলিভিশন স্টেশন ভাঙচুরের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়—যার সর্বশেষ উদাহরণ ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়ার অফিসে ভাঙচুর। এসব প্রতিষ্ঠান হয়তো অনৈতিক নীতিমালা মেনে চলেছে, একপাক্ষিক অবস্থান নিয়েছে বা ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সেবায় নিয়োজিত ছিল।

কিন্তু জোর করে তাদের কণ্ঠরোধ করে দেওয়া যাবে না। সাংবাদিকতা চর্চায় তারা যতই স্থূল ও অনৈতিক হোক না কেন, প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন, তাদের গ্রেপ্তার বা ভয় দেখানো উচিত না।

আপনার মতামত লিখুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ