25 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024

সন্তানের নাম ‘আবু সাঈদ’ রেখে আন্দোলনে গিয়ে নিহত হন সাজু

পঞ্চগড়ের সাজু মিয়া (২৬)। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে রেখে জীবিকার তাগিদে গাজীপুরে যান জুলাইয়ের ২৪ তারিখে। একই মাসের ২৭ তারিখে তার স্ত্রীর কোলজুড়ে আসে এক ফুটফুটে ছেলে সন্তান। নাম রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদের নামানুসারে ‘আবু সাঈদ’।

কে জানত মাত্র ১৬ দিনের মাথায় নিজেও পাড়ি জমাবেন সেই আবু সাঈদের কাতারে। সন্তানের মুখ না দেখেই তাকে চলে যেতে হলো না ফেরার দেশে।

গত ১২ আগস্ট বিকেলে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয় সাজু মিয়াকে। এর আগে রোববার (১১ আগস্ট) রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। সাজু মিয়া একদফা দাবির আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন গত ৫ আগস্ট। তার মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে বইছে শোকের মাতম। নবজাতক সন্তান নিয়ে দিশাহারা তার স্ত্রী শারমিন আক্তার।

আরও পড়ুনঃ  থানা থেকে লুট করা অস্ত্র নিয়ে টিকটক করতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু

সাজু মিয়ার বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের টোকরাভাষা মিরপাড়া গ্রামে। তিনি সেখানকার আজাহার আলীর ছেলে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সাজু ছিল সবার বড়।

তিনি গাজীপুরের একটি টেক্সটাইল মিলে চাকরি করে পরিবার চালাতেন। সাজু মিয়া ২০১৫ সালে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন।

এরপর অভাবের সংসারের হাল ধরতে টেক্সটাইল মিলে কাজ শুরু করেন। তিনি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদের অঙ্গ সংগঠন শ্রমিক অধিকার পরিষদের পঞ্চগড় জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন।

শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে সাজু মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বিলাপ করছেন তার দুই বোনসহ মা-বাবা। ঘরের ভেতর শিশু ছেলে আবু সাঈদকে নিয়ে অনবরত চোখের পানি ফেলছেন শারমিন আক্তার। স্বজনদের সমবেদনা যেন কোনো কাজেই আসছে না। বারবার বলছিলেন, এই ছোট বাচ্চাকে নিয়ে কোথায় যাব আমি, আমার ছেলেকে কে মানুষ করবে? আমি বিচার চাই, আমার স্বামীর খুনিদের বিচার চাই।

আরও পড়ুনঃ  আবু সাঈদ হত্যার তথ্য অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের পদত্যাগ

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গাজীপুরের মাওনা থেকে একটি মিছিল বের হয়েছিল। সে মিছিলে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন সাজু মিয়া। মাওনা থেকে ছাত্র-জনতা মিছিলটি নিয়ে গণভবনের দিকে রওনা হয়। ওই সময় ময়মনসিংহ থেকে সাতটি পিকআপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু পুলিশ গিয়ে গুলি করতে থাকে। এ সময় দুই দফা গুলি সাজুর পিঠে লাগে। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এনজিও নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস

সাজুর বাবা আজহার আলী বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আমার ছেলে। এখন কে এই পরিবার চালাবে। আমার ছেলে তার সন্তানের মুখ দেখার জন্য হাসপাতালে ছটফট করেছিল কিন্তু দেখতে পারল না। বারবার বলেছিল, আমি বাঁচব না আমার ছেলেকে একবার দেখতে চাই। আমরা তাকে তার ছেলের মুখ দেখাতে পারিনি- বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সাজুর মা বলেন, হাসপাতালে থেকে ফোনে আমার ছেলে আমাকে বলেছিল, ‘কান্না করিও না মা, তোমার ছেলে শহীদ হবে। তুমি শহীদের মা হবা। শুধু আমার ছেলেকে দেখে রেখো, মানুষের মতো মানুষ করো।

পঞ্চগড় জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি মাহফুজার রহমান বলেন, এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। নবজাতক সন্তানের মুখ দেখারও সুযোগ পাননি আমাদের সহযোদ্ধা সাজু।

আপনার মতামত লিখুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ