21 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024

যশোরে শাহীন চাকলাদারের পাঁচ তারকা হোটেলে আগুন, নিহত ১৮

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের পর যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিসংযোগ করেছে আন্দোলনকারীরা। এতে অন্তত ১৮ জন নিহত ও গুরুতর আহত হয়েছেন শতাধিক।

সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে এ ঘটনাটি ঘটে। এ সময় ভেতরে আটকা পড়েন অনেকেই। পরে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকারী দল ১৪ তলা বিশিষ্ট হোটেলের ছাদ থেকে কয়েকজনকে উদ্ধার করে।

আরও কয়েকজনকে ১৪ তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে উদ্ধারের জন্যে নিশানা উড়াতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি দল সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে যশোর শহরে বিজয় মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। ওই মিছিল থেকে আন্দোলনকারীরা চিত্রা মোড়ে অবস্থিত হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর শুরু করে।

দ্বিতীয় দফায় চারটার দিকে তারা অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় হোটেলে নিচ থেকে ১২, ১৩ ও ১৪ তলায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে যান। এ সময় হোটেলে আটকা পড়া কয়েকজন ১৪ তলার বারান্দায় গিয়ে উদ্ধারের জন্যে হাত নেড়ে আকুতি জানান।
উদ্ধারকারী একটি হেলিকপ্টার হোটেলে ছাদে ল্যান্ড করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ সময় আটকাপড়া এক ব্যক্তি ছাদে গিয়ে দাঁড়ালে হেলিকপ্টার তাকে উদ্ধার করে।

আরও পড়ুনঃ  ‘জুলাই বিপ্লবে পা হারিয়ে আমি গর্বিত’

আরো পড়ুন ঢাকার অনেক পুলিশ বক্সে পুলিশ নেই
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, জাবির হোটেলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ১৮ জনের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে আনে ফায়ার সার্ভিসের টিম। আহত হয়েছে অনেকে। আহতদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক।

হোটেলে কত জন আটকা পড়েছে বা কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানার জন্যে হোটেলর মালিক শাহীন চাকলাদারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এছাড়া হোটেলের মুঠোফোন নম্বর, ফায়ার সার্ভিস যশোরের উপ- পরিচালক, যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।

আরও পড়ুনঃ  ‘গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা’ ভিডিও দেখানো সেই ডিসি এখন ডিবি হেফাজতে

এদিকে, শাহীন চাকলাদারের হোটেল ছাড়াও শহরের কাজী পাড়া কাঠালতলাস্থ বাসভবন, কাজীপাড়াতে যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বাসা, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, শেখ রাসেলের ভাস্কর্য্যসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১ টার পর থেকে কারফিউ ভেঙ্গে যশোর শহরের চাঁচড়া মোড়ে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। এছাড়া বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে শহরের ঈদগাহ মোড়ে অবস্থান নেয় জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

দিনভর তারা সরকার পতনের নানা স্লোগান দেন। এরপর বিকেল চারটার দিকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন এমন সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরে আন্দোলনে থাকা ছাত্র জনতা ও বিএনপির নেতাকর্মীরা শহরে আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে দুবৃর্ত্তরা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় বলে স্থানীয়রা জানান।

আরও পড়ুনঃ  হাতে হাত রেখে ষড়যন্ত্রের বন্যা মোকাবেলা করব: আসিফ

এদিকে কেশবপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়, প্রথম আলো পত্রিকার যশোরের কেশবপুর প্রতিনিধি দিলীপ মোদকের বাসভবন ও পত্রিকার দোকানে হামলা ও ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনে ক্ষয়ক্ষতি বেশি না হলেও দিলীপ মোদকের ব্যবহৃত মটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

হামলা ও ভাঙচুরের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে রাস্তায় দেখা যায়নি। ফোন করলেও কেউ ফোন ধরেননি। এছাড়া চাঁচড়ায় যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় দুবৃর্ত্তরা।

এ বিষয়ে যশোরে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান জানান, অনেকদিন ধরে যশোরে আন্দোলন করে আসছি। যশোরে কোথাও সহিংসার ঘটনা ঘটেনি। আজ আমাদের বিজয়ের দিনে এমন ঘটনা ঘটেছে সেটি দুঃখজনক। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব ঘটনা ঘটায়নি। যারা করেছে, তাদের রাজনীতিক কোন উদ্দেশ্য রয়েছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ