25 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024

ভিভিআইপি প্রটোকল থাকা সত্ত্বেও জ্যামে বসে থাকলেন ড. ইউনূস

চিরাচরিত প্রথা ভেঙে ভিভিআইপি প্রটোকল নিয়ে জ্যামের মধ্যেই বসে রইলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঢাকার সড়কে অন্যান্য গণপরিবহনের সঙ্গেই চলেছে তার গাড়ি বহর।

ব্যস্ত সড়কে যানজটের কারণে কয়েক মিনিট বসেছিলেন তিনি। তখন তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রটোকলে নিয়োজিত থাকা সদস্যরা যানজটের মধ্যে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ান। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

জানা গেছে, রোববার ড. ইউনূসের গাড়িবহন রাজধানীর হ্যান্ডবল স্টেডিয়াম সংলগ্ন বক চত্বর এলাকা থাকা অবস্থায় ভিডিওটি করা হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী লেখা ড. ইউনূসের গাড়ি ঘিরে রেখেছেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যরা। এ সময় চারপাশের উৎসুক জনতাকে লক্ষ্য করে বলতে শোনা যায়, আপনারা সবাই রাস্তার ধারেই দাঁড়িয়ে থাকুন।

নিরাপদ দূরত্বে থাকুন। রাস্তা থেকে দূরে দাঁড়ান। কোনো গাড়ি ভেতরে ঢোকাবেন না। বাম পাশের রিকশা ডান পাশের লেনে ঢোকাবেন না। কেউ রাস্তা ক্রস করার চেষ্টা করবেন না।

বাংলাদেশের প্রশাসনিক নিরাপত্তা প্রটোকল বিধি অনুসারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর চলাচলের সময় সড়কের এক পাশ খালি করে চলাচলের বিধান রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  কাদের ও কামালের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ৬ কংগ্রেস সদস্যের চিঠি

তাদের চলাচলের ১৫ মিনিট আগে থেকেই নির্দিষ্ট সড়কটির একপাশ ফাঁকা করে সেখানে জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে রাখার নিয়ম অনুসরণ করা হয়।

ভিআইপি কে?

ভিআইপি বা ভেরি ইম্পরট্যান্ট পারসন—এই শব্দগুলো প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের আইনে প্রবেশ করে সামরিক শাসকের হাত ধরে। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন সামরিক শাসক ও প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ‘প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স অর্ডিন্যান্স-১৯৮৬’ শিরোনামে একটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির

শারীরিক নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (পিএসএফ) গঠন করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯১ সালে নির্বাচিত সরকারের আমলে অধ্যাদেশটি সংশোধন করে দ্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স অর্ডিন্যান্সের ওই আইনের অধীনে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) গঠিত হয়।

দ্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স অর্ডিন্যান্সের ধারা ৮(১) অনুযায়ী, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক নিরাপত্তা প্রদান করা।

‘ভিভিআইপি’ শব্দটি সরাসরি উল্লেখ না থাকলেও এ থেকে বোঝা যায়, আইন অনুযায়ী ‘ভেরি ভেরি ইম্পরট্যান্ট পারসন’ হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

ভিআইপিদের নিরাপত্তা প্রটোকলের নিমিত্তে বাংলাদেশের প্রশাসন একটি ‘নিরাপত্তা প্রটোকল রেড বুক’ অনুসরণ করে থাকে। রেড বুক অনুসারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ভিভিআইপি।

আরও পড়ুনঃ  পালানোর সময় সীমান্তে আটক যশোর ছাত্রলীগের নেতা

ভিআইপি হলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, সিনিয়র সচিব, সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশের প্রধান। মন্ত্রী বলতে পূর্ণ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী সবাইকে বোঝায়।

বিচারপতি বলতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের বোঝায় আর সচিব বলতে বোঝায় সচিব পদমর্যাদার সবাইকে। তবে সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য যে কাউকে ভিআইপি মর্যাদা দিতে পারে। বিধি অনুযায়ী, ভিআইপিরা সরকারি প্রটোকল, নিরাপত্তা ও আবাসন পেয়ে থাকেন।

সড়কে ভিআইপি প্রটোকল

প্রশাসনিক নিরাপত্তা প্রটোকল রেড বুকের বিধি অনুসারে, শুধু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় সড়কের এক পাশ খালি করে চলাচলের বিধান আছে। ভিভিআইপিদের চলাচলের ১৫ মিনিট আগে থেকে নির্দিষ্ট সড়কটির এক পাশ ফাঁকা করে সেখানে সাধারণ যান চলাচল বন্ধ রাখার নিয়ম অনুসরণ করা হয়। বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানের চলাচলের ক্ষেত্রেও একই রীতি প্রযোজ্য।

সংবিধানে যা আছে

সংবিধানের ৭(১) অনুচ্ছেদ বলছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে।’ ১৫(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হলো, তার প্রত্যেক নাগরিকের জন্য অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। দেশের নাগরিকদের সঙ্গে শ্রেণিবৈষম্য করে ভিআইপিদের জন্য আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করার কথা কোথাও নেই।

আরও পড়ুনঃ  হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে ফের নতুন বার্তা জয়ের

১৯(১) অনুচ্ছেদ বলছে, ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবে।’ ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’ ২৮(১) অনুচ্ছেদ বলছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না।’ সুতরাং ভিআইপি কালচার বাংলাদেশের সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে। সে অনুযায়ী বর্তমানে দেশের সরকার প্রধান হিসেবে ড. ইউনূস ভিভিআইপি মুভমেন্ট সুবিধা নিতে পারেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ