21 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024

খুলে নেওয়া হচ্ছে মসিকের ‘নৌকা বাতি’, লুটপাটের তদন্ত দাবি

ক্ষমতাসীনদের খুশি করতে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) এলাকার প্রধান প্রধান সড়কে ‘নৌকা আকৃতির সড়ক বাতি’ স্থাপন করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর হঠাৎ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এই নৌকা বাতি।

এ ঘটনায় তদন্তপূর্বক সড়ক বাতি প্রকল্পের পিডি ও মসিক বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জিল্লুর রহমানসহ জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন নগরবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েকদিন ধরে নগরীর নতুন বাজারসহ বিভিন্ন সড়ক থেকে সিটি করপোরেশনের গাড়ী দিয়ে ক্রেন লাগিয়ে খুলে নেওয়া হচ্ছে নৌকা আকৃতির সড়ক বাতি।

এ সময় জানতে চাইলে মসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারিরা জানান, কর্তাদের নির্বাহী আদেশে নৌকা বাতি খুলে নেওয়া হচ্ছে। তবে কেন বা কি কারণে এই বাতি খোলে নেওয়া হচ্ছে, তা আমাদের জানা নেই।

একই ধরনের মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইউসুফ আলী। তিনিও বিষয়টি জানেন না দাবি করেন এবং এই বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুনঃ  হিরো আলমের সিনেমা ‘আরাফাতের চার বউ’ ও ‘মাস্তান হারুন’

তবে মসিক সূত্রে জানা গেছে- সড়ক বাতি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই নৌকা বাতি স্থাপন করা হয়েছে। আর এ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মসিক বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জিল্লুর রহমান। তিনি নিজেই ঠিকাদার হিসাবে এই নৌকা বাতি স্থাপন করেন।

কিন্তু সরকারের এই প্রকল্পে কত টাকা বরাদ্ধ ছিল, কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন এবং কত কিলোমিটারজুড়ে কতগুলি নৌকা বাতি লাগানো হয়েছে, তা প্রকাশ করতে অপরাগত প্রকাশ করেছেন প্রকৌশলী মো: জিল্লুর রহমান।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- নগরীর দিঘারকান্দা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সিটি করপোরেশনের সীমানা থেকে শম্ভুগঞ্জ, রহমতপুর, গাঙ্গিনাপাড়, নতুন বাজার, কাঁচিঝুলিসহ নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে স্থাপন করা হয়েছে এই নৌকা বাতি। কিন্তু জানা যায়নি এই প্রকল্পের বরাদ্ধ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগ- ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) পৌরসভা থাকাকালে জিল্লুর রহমান ছিলেন উপসহকারী প্রকৌশলী; কিন্তু সিটি করপোরেশন ঘোষনার পর তিনি হয়ে যান বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং সড়ক বাতি উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি। গত কয়েক বছরে এসব পদে দায়িত্ব পালন করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি হয়েছেন কোটি কোটি টাকা মালিক।

আরও পড়ুনঃ  ১৫ আগস্টের মধ্যে কাজে না ফিরলে পুলিশ সদস্যদের পলাতক ঘোষণা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাড়ী-গাড়ীসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এমনকি বিদ্যুৎ বিভাগের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী জিল্লুর রহমানের সাথে কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষন করলে বিভিন্ন কায়দায় তাকেও সরিয়ে রাখা হয় কাজের বাইরে। বর্তমানেও বিদ্যুৎ বিভাগের দক্ষ ও অভিজ্ঞ একাধিক কর্মকর্তাকে নামমাত্র চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এসব নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে-বাইরে নানা গুঞ্জণ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, বিদ্যুৎ বিভাগে বিগত কয়েক বছরে শত শত কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। কাজের নিম্নমানসহ শিডিউল অনুযায়ী অনেক যন্ত্রাংশ ব্যবহার না করে অধিক মূল্যের বিল-ভাউচার তৈরী করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এই প্রকল্পের নথিপত্র তদন্ত করলে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলবে বলেও দাবি করেছে মসিকের একাধিক সূত্র।

আরও পড়ুনঃ  জানা গেল অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন ৪ উপদেষ্টার নাম

গত ৮ আগষ্ট এই বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক বাতি উন্নয়ন প্রকল্পের (পিডি) ও মসিক বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জিল্লুর রহমান বলেন, কতগুলি বাতি কত কিলোমিটারজুড়ে লাগানো হয়েছে, তা আপনারা সরেজমিনে গিয়ে জেনে আসুন। বরাদ্ধ আমার মনে নেই। তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন, কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পরে দেখা যাবে।’ এ সময় নানা অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এসব বিষয়ে জানতে সরেজমিনে গত ১১ আগষ্ট দুপুরে মসিকের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম মিঞা’র কাছে গেলে তিনি এসব বিষয় জানেন না বলে জানান। তবে ১৩ আগষ্ট তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, গত জুন মাসে এই প্রকল্পটি শেষ হয়ে গেছে। এ সময় বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, নৌকা বাতি মসিকের সৌজন্যে স্থাপন করা হয়েছে। এতে কোন বাজেট-বরাদ্দ নেই।

আপনার মতামত লিখুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ