সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের পাঁচ নেতা এবং দলটির ঘনিষ্ঠ আরও দুজনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার কমিশন থেকে এ অনুসন্ধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
যাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তারা হলেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) জান্নাত আরা হেনরী, সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল, তার স্ত্রী যুব মহিলা লীগ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব-১ (ডিপিএস) আশরাফুল আলম খোকন ও শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (পিয়ন) মো. জাহাঙ্গীর আলম।
দুদকের কাছে থাকা অভিযোগে বলা হয়, ২০০৮ সালে শাজাহান খানের অস্থাবর সম্পদ ছিল প্রায় ৭৬ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯৭ টাকার। বর্তমানে শাজাহান খানের ঢাকা ও শরীয়তপুরে ফ্ল্যাট, জমি, দুটি গাড়ি, স্ত্রীর নামে রাজউকের ১০ কাঠার প্লট এবং ৯৬ ভরি সোনা কিনেছেন।
এ ছাড়া তার দুটি বাস, একটি গাড়ি ও একটি মাইক্রোবাস রয়েছে। নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী তার সম্পদের পরিমাণ ১২ কোটি ৪৯ লাখ ৫২ হাজার ৬০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে তার সম্পদ অনেক বেশি। জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
ওই প্রতিবেদনে শতাধিক সংসদ সদস্যের অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরা হয়। তাতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর যে ১০ জন এমপির সম্পদ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, তার মধ্যে ৩ নম্বরে ছিল শাজাহান খানের নাম। তার সম্পদ বৃদ্ধির হার ৪ হাজার ৬৯৭ শতাংশ।
আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার দিনাজপুর-৫ আসন থেকে টানা আটবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি অর্থ লোপাট, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী অপু উকিলের ঢাকার উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর হোল্ডিংয়ে দুই ইউনিটের সাততলা বাড়ি নির্মাণ করেন। এ ছাড়া ঢাকার ধানম-িতে ৩টি ফ্ল্যাট ক্রয় এবং নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌরসভার সাউদপাড়ায় বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপ-প্রেস সচিব-১ (ডিপিএস) আশরাফুল আলম খোকনের বিরুদ্ধে স্বর্ণ ও মুদ্রা চোরাচালানের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি ২০১৩ সালে ডিপিএস হওয়ার পর থেকে স্বর্ণ ও মুদ্রা চোরাচালান সিন্ডিকেট পরিচালনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সাবেক এই ডিপিএস বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। নিজের পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশ এবং দেশের বাইরে নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন।
এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (পিয়ন) মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
ডাক বিভাগের সাবেক ডিজিসহ দুজনের নামে মামলা : ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক শুধাংশু শেখর ভদ্র এবং ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল ও সহকারী প্রকল্প পরিচালক মোস্তাক আহমেদের নামে মামলা করেছে দুদক। মামলার এজাহারে বলা হয়, এই দুই কর্মকর্তা ডাক বিভাগের ‘পোস্ট-ই-সেন্টার’ শীর্ষক প্রকল্পে বরাদ্দ ১৫ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকায় ৫০০টি এইচইপি সার্ভার ও ইউপিএস কিনে তা ব্যবহার না করে সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৯-এর ২৩ ধারা লঙ্ঘন করে সরকারি অর্থের অপব্যবহার করেছেন।