21 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024

৩১ বছর পর বাঁধ খুলে দিল ভারত, ডুবল ফেনী-কুমিল্লা

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। এতে এখন পর্যন্ত আটজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতেই ৩১ বছর পর ত্রিপুরার ডম্বুর গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এই বাঁধ খুলে দেয়ায় ভারতের পানি ঢুকে হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশের ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে।

সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দাড়িয়েছে ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি। এখনো হাজারো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে এসব জায়গায়। এমন পরিস্থিতিতে এসব এলাকা পুরোপুরি বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে মোবাইল নেটওয়ার্কও।

ফেনীর নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, এই এলাকায় ১৯৮৮ সালের পর বন্যা পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়নি আগে কখনো। ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পানিতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, “পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সবার কল্পনার বাইরে। এখন অনেক মানুষ পানিতে আটকা পড়েছে। তাদেরকে উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড”।

গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ফেনীর মঙ্গলবার থেকে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। জেলার মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর প্রভাবে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার প্রায় সব এলাকা তলিয়ে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  শাহবাগ অবরোধ করেছেন রিকশাচালকরা

মঙ্গলবার রাত থেকে ওইসব এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠন নৌকায় করে পানি বন্দীদের উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যান। ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয় বুধবার সকালে। এরপরই সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা পানি বন্দীদের উদ্ধারে স্পিডবোট নিয়ে মাঠে নামে।

ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীন আক্তার বলেন, ফেনীর যে সব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তার অনেকগুলো সীমান্ত এলাকা। পরিস্থিতি এতটাই দ্রুতই খারাপ হয়েছে গেছে আমাদের সামাল দিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা দুর্গত এলাকায় পানি-বন্দীদের উদ্ধারে কাজ করছি।

ভারি বৃষ্টিতে গত সোমবার দুপুর থেকে পানি বাড়তে শুরু করে মহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীতে। বিভিন্ন স্থানে বাঁধের ভাঙা জায়গা স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। মঙ্গলবার সকালে থেকে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়। একে একে তলিয়ে যেতে থাকে পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার এলাকা।

আরও পড়ুনঃ  যতটুকু সাধ্য ছিল করে আসছি, অপারগ হলে চলে যাবে: সাখাওয়াত

স্থানীয় সাংবাদিক দিলদার হোসেন নোমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এখন পর্যন্ত ওই তিনটি উপজেলার অন্তত ৯৫ শতাংশ এলাকা পানির নিচে ডুবে গেছে। এমন কোনো বাড়িঘর নেই যেখানে বন্যার পানিতে তলায়নি। মানুষের পাশাপাশি গৃহপালিত পশু পাখিও এখন পানিবন্দি”।

গত কয়েকদিনে টানা বৃষ্টির পাশাপাশি ঢলের পানি বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় কুমিল্লা সদর উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বাড়িঘর, ফসলি জমি রাস্তা ঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে নোয়াখালী জেলায়ও। জেলা সদর, সোনাইমুড়ীসহ বেশ কিছু এলাকায় তৈরি হয়ে তীব্র জলাবদ্ধতা। নোয়াখালীর মাইজদীতে হাঁটুপানি জমেছে শহরের প্রধান প্রধান রাস্তায়। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে পানির নিচে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির শতাধিক গ্রাম তলিয়েছে পানির নিচে। এই উপজেলার মাছের খামার, ঘরবাড়ি ডুবে গেছে বন্যার পানিতে। এই এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, গত তিন দশকেও এই এলাকায় এমন বন্যা পরিস্থিতি দেখেননি তারা। এলাকার পানিবন্দি অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে।

আরও পড়ুনঃ  একদিনেই রেমিট্যান্স এলো ১০৯ মিলিয়ন ডলার

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, “ওইসব এলাকা ছাড়াও আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি সমতল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে”।

তীব্র বৃষ্টিপাতের কারণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ত্রিপুরায় অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। আরও দুজন নিখোঁজ বলে জানাচ্ছে স্থানীয় সূত্রগুলো। বৃষ্টিপাতের ফলে হাওড়া, খোয়াই, মুহুরী ও ঢলাইসহ রাজ্যের প্রায় সব নদীই বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে।

এমন পরিস্থিতিতেই ত্রিপুরার ডম্বুর হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট বা ডম্বুর গেট খুলে দিয়েছে রাজ্যটির প্রশাসক। এই বাঁধ খুলে দেয়ায় ভারতের পানি ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশে। যা সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে খুলে দিয়েছিল ভারত।

ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতী জেলার জেলাশাসক তরিৎ কান্তি চাকমা তার সরকারি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যাণ্ডেলে জানিয়েছেন যে, গোমতী নদীতে জলস্তর বেড়ে যাওয়ার ফলে ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধের জলস্তরও বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলেছিল। বাঁধ বাঁচাতে গেট খুলে জল ছেড়ে দিতে হয়েছে”।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

আপনার মতামত লিখুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ