17 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024

লাভ ছাড়া দুই বছর সয়াবিন তেল বিক্রিতে প্রস্তুত বসুন্ধরা গ্রুপ

আগামী দুই বছর সয়াবিন তেল কোনো লাভ ছাড়া বিক্রি করতে প্রস্তুত বসুন্ধরা গ্রুপ। এ জন্য কাঁচামাল আমদানি ও এলসি খুলতে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন বলে বলে জানিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ফুড বিভাগের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের প্রধান মো. রেদোয়ানুর রহমান।

বুধবার (২১ আগস্ট) রাজধানীর রমনায় অবস্থিত প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যালয়ে ভোজ্য তেল, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, শিল্প, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষে থেকে এ কথা জানানো হয়।

সভায় শিক্ষার্থীদের সয়াবিন তেলের দাম কমানোর বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মো. রেদোয়ানুর রহমান বলেন, ‘আমি বলি কোন জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে। আমি আমাদের কম্পানির তথ্য সব কিছু নিয়ে এসেছি। এখানে তা প্রকাশ করতে পারি। এখানে আমি কিছু প্রস্তাব দিতে পারি।

আজ থেকে দুই বছর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বলেছিলাম, যত দিন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলবে আমরা কোনো লাভ ছাড়া পণ্য (সয়াবিন তেল) বিক্রি করত পারি। এতে এক টাকাও প্রফিট করব না। আমাদের কারখানা চার মাস বন্ধ ছিল। আমরা তখন সরকারকে বলেছিলাম আপনারা আমাদের ক্রুড ওয়েল দেন।

যেহেতু ডলার সংকটের কারণে আমদানি করতে পারছি না। কারণ আমাদের কারখানায় ৫-৭ হাজার লোক কাজ করে তারা বেকার হয়ে যাবে।’

আরও পড়ুনঃ  নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক

তিনি বলেন, ‘যে এডিবল অয়েল বিক্রি করা হয় তা সফটওয়্যারে উল্লেখ থাকে। ভ্যাট চালান ছাড়া কোনো পণ্য বের হবেই না। আজকে ২১ তারিখ, আমি আপনাদের কম্পানির পক্ষ থেকে বলছি, অন্তর্বর্তী সরকার বলেন, বা অন্য কোনো সরকার বলেন।

আমরা আরো দুই বছর জিরো প্রফিটে ব্যবসা করা লাগে আমরা করব। বসুন্ধরা গ্রুপ প্রস্তুত আছে। আমরা জিরো প্রফিটে ব্যবসা করতে চাই। আমাদের কোনো সমস্যা নাই। এখন এডিবল অয়েলে ৩০টি কম্পানি আছে।’

তিনি বলেন, ‘সাপ্লাই চেইন ঠিক করতে হবে। ক্রুড ওয়েল ব্রাজিল থেকে আনতে ৪৫ থেকে ৫৫ দিন লাগে। তেলবীজ এনে সেটা বাজার জাত করতে ৬০ দিনের ওপরে সময় লাগে। এ সময় কমিয়ে আনতে হবে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আমরা ডলার কিনতে পারি না। ডলারের দাম বাংলাদেশ ব্যাংকের দাম অনুসারে পাওয়া যায় না। সব ব্যাংকেই ডলারের দাম বেশি রাখে। এই খরচটা গ্যাপ থেকে যায়। এই জায়গা ঠিক করতে হবে।’

একই অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতি কেজি ভোজ্য তেলের দাম ১২০ টাকা, চিনির দাম ৯০ টাকা ও আলুর দাম ২৫ টাকায় নামিয়ে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি যত প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরসহ বেসরকারি যত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরও এ আলটিমেটাম দিচ্ছি। আপনারা এক সপ্তাহের মধ্যে কিভাবে এই দাম নির্ধারণ করবেন, সেটা আপনাদের দায়িত্ব। ছাত্র ও জনতার পক্ষ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে এ দামের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’

আরও পড়ুনঃ  শাহবাগের নাম পাল্টে মামাবাড়ির আবদারবাগ রাখা হোক: কুদ্দুস বয়াতি

একই সঙ্গে দুর্নীতি, দখলদারি, সিন্ডিকেট ও স্বৈরাচারী রোধে একটি ট্রুথ কমিশন গঠন করতে হবে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।

ব্যবসায়ী বিভিন্ন সংগঠনকে উদ্দেশ করে ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘এত দিন বাংলাদেশে যেভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিগত সরকারের রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্রব্যমূল্যকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। মানুষকে শোষণ করা হয়েছে। আমরা সেসব প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানাব আপনারা জনবান্ধব ও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন করার যে মূল্যবোধ সেটিকে আপনারা ধারণ করে ব্যবসা করবেন। অতি মুনাফা পরিহার করবেন। দেশের মানুষ যেন চারটা ডাল, ভাত ও ডিম খেতে পারে সে ব্যবস্থা করবেন। কারণ দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সে ক্ষেত্রে আপনারা মানবিক হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করবেন বলে আমরা আশা করছি।’

ছাত্র-জনতাকে সারা দেশে সুশৃঙ্খলভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সাজাতে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সিটি গ্রুপের প্রতিনিধি অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘ট্যারিফ কমিশন থেকে খোলা চিনির দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা। তার মানে কমিশনের চেয়ে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। আবার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৬ টাকা কমে সয়াবিন তেল ও পাম ওয়েল বিক্রি করা হচ্ছে।’

আরও পড়ুনঃ  পদত্যাগ করলেন ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান

ভারতে ৭৮ টাকা কেজি চিনি বিক্রি হয় কিভাবে ছাত্রদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিক্রি ভারত চিনির ৫৭ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করে বাকিটা তারা নিজেরা উৎপাদন করে। ওরা প্রতি কেজি চিনিতে সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্সসহ দেয় ৩ টাকা ৭২ পয়সা। আর আমদের দিতে হয় ৪০-৪২ টাকা। এ অবস্থায় আমাদের চিনির দাম বেড়ে যায়। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপের লোকসান হয়েছে ভারত থেকে চোরাপথে চিনি আসার কারণে। এখন ভারত থেকে ৪০ শতাংশ চিনি চোরাকারবারির মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এটা বন্ধ করতে হবে। গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে হবে। ব্যাংকে এলসি খোলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। যেখানে সরকার নির্ধারিত দামে ডলার পাওয়া যাবে।’

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে মেঘনা, সিটি, এস আলম, দেশবন্ধু, এডিবল অয়েল, টি কে গ্রুপ, শিল্প মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন, ভোক্তা অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিসহ ও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: জুম বাংলা

আপনার মতামত লিখুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ