26 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024

ঢাবিতে আস্থার কাউকে ভিসি নিয়োগ দিলে তাদের ডাকেও মানুষ এভাবে সাড়া দেবে

টিএসসিতে গতকাল সারাদিন সবমিলিয়ে জমা হয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ২২ হাজার ১৭২ টাকা। এইতো গেল নগদ টাকার হিসাব। এর সাথে আছে অসংখ্য মানুষের দেওয়া বিশাল পরিমান ত্রাণ সামগ্রী দান। এটি এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এমন বাংলাদেশ আমরা আগে কখনো দেখিনি। এটা কীভাবে সম্ভব হলো? এটা সম্ভব হয়েছে এ কারণে যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে যে, তারা সৎ, কর্মঠ এবং পরোপকারী।

তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি সর্বজনের আস্থা এবং বিশ্বাসের কাউকে ভিসি ও প্রোভিসি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে তাদের ডাকেও মানুষ একইভাবে সারা দেবে। প্রশাসন যদি জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, পড়ার জন্য একটা টেবিল পাবে না তা হতে পারে না। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ঘুমাবার জন্য একটা বিছানা পাবে না তা হতে পারে না। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ভালো মানের পুষ্টিকর খাবার পাবে না তা হতে পারে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা একটা মনোরম ক্যাম্পাস পাবে না তা হতে পারে না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট-ডক, পিএইচডি প্রোগ্রাম ও টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম থাকবে না তা হতে পারে না। এসব জানিয়ে মানুষের কাছে আবেদন করলে, অ্যালামনাইদের কাছে আবেদন করলে এবং সরকারের কাছে দাবি জানালে মিরাকেল ঘটে যাবে।

আরও পড়ুনঃ  রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান

একইভাবে আমরা মানুষের অর্থ দিয়ে বিশ্বমানের গবেষণা ইনস্টিটিউটও গড়তে পারি। মনে রাখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের উন্নয়ন ছাড়া পৃথিবীর কোন দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন ঘটেনি। চীনের উন্নয়নের সাথে Tsinghua, Peking প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া ও গবেষণার উন্নতির সম্পর্ক আছে। এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এখন বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা ২০ এর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। সিঙ্গাপুরের উন্নতির সাথে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের উন্নয়নের সরাসরি সম্পর্ক আছে।

ইংল্যান্ডের উন্নয়ন ও সুপার পাওয়ার হওয়ার পেছনেও কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল ভূমিকা আছে। তেমনি আমেরিকার উন্নয়ন ও সুপার পাওয়ার হওয়ার পেছনে হার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, কর্নেল, ইয়েল ইত্যাদি বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের উন্নয়ন ছাড়া পৃথিবীতে কোন দেশ সত্যিকারের উন্নত হওয়ার উদাহরণ নাই। পৃথিবীর ডাটা থেকে যেটা আমরা নিশ্চিত পরীক্ষিত ট্র্যাক জেনেও আমরা কেন সেই পথে হাঁটিনি? কেন শিক্ষায় বরাদ্দ কমানো হলো? কেন শিক্ষক ও ছাত্রকে এত অবহেলা করা হলো?

আরও পড়ুনঃ  ভয় ছাড়াই ধর্ম পালন করার বাংলাদেশ গড়তে চান ড. ইউনূস

এত অবহেলা করে আওয়ামীলীগ সরকার তার ফলও এখন ভোগ করছে। আশা করি, আগামীর সব সরকার এখন থেকে শিক্ষা নেবে। আমাদের বুঝতে হবে যে দেশটা কেন অবাসযোগ্য? কেন মানুষ এই দেশ থেকে পালতে মরিয়া। কারণ দেশে এখন কোন কাজ ঘুষ ছাড়া করা সম্ভব না। আপনার সন্তানতো আপনার কাছ থেকে ঘুষ নেয় না। এর অর্থ যারা নেয় তাদেরকে ভালো হবে হবে। যারা নেয় তারা অন্যের সন্তান। তাই অন্যের সন্তান যাতে ভালোভাবে গড়ে উঠে তার জন্য আমরা সকলে কন্সার্টেড উপায়ে যদি কাজ করি তাহলে অন্যের সন্তানরা ভালো মানুষ হিসাবে বড় হবে।

ভালো মানুষ হওয়ার একটাই উপায় যদি তারা সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়। এ জন্য শিক্ষাকেই সর্বোচ গুরুত্ব দিতে হবে যার জন্য শিক্ষায় বড় বিনিয়োগ দরকার। সেটা সরকার এবং জনগণ একসাথে যুগলবন্দী হয়ে করতে পারে। যারা দান করতে এসেছে তাদের ধর্ম দেখা হয়নি, তাদের গোত্র দেখা হয়নি, জেন্ডার দেখা হয়নি। যখনই দেখবেন কেউ মানুষকে বিভাজনের কার্ড খেলছে তখনই মানুষের শক্তিতে বিভক্তি আসবে। দেশকে গড়তে হলে বিভাজিত মানুষের শক্তিকে একত্রিত করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  বন্যাদুর্গত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ফ্রি করার নির্দেশ তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার

ব্রিটিশরা যেমন আমাদের নিয়ে বিভাজনের কার্ড খেলেছে, ঠিক তেমনি আমাদের রাজনৈতিক সরকারগুলোও নানারকম বিভাজনের কার্ড খেলেছে। যেমন গত ১৫টি বছর আওয়ামী লীগ যারা করে তাদেরকে উচ্চ বর্ণের মানুষ হিসাবে ট্রিট করা হয়েছে। এর আগে বিএনপির আমলে বিএনপি যারা, করে তাদেরকে উচ্চ বর্ণের মানুষ হিসাবে ট্রিট করা হয়েছে। আবার ধর্মীয় কার্ড আছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কার্ড আছে, ভারত এবং পাকিস্তান কার্ড আছে। আমাদের এতদিনকার সরকারগুলো আমাদের সুপ্তশক্তিকে বুঝতে দেয়নি। আজ আমরা একটি ক্রসরোডে। আর ভুল করা যাবে না।

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

(ফেসবুক থেকে নেওয়া)

আপনার মতামত লিখুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ