বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
সোমবার (২৬ আগস্ট) ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, উভয় দেশের জনগণ যখন সুসম্পর্ক চায়, তখন একটি দেশের সর্বোচ্চ প্রভুসুলভ আচরণ বন্ধ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। এর পরিবর্তে একে অপরকে সমান অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা জরুরি।
জি এম কাদের বলেন, শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে প্রত্যর্পণ করা উচিত। শেখ হাসিনার শাসনামলে তার ও তার সরকারের মাধ্যমে সংঘটিত সব অপরাধের জন্য বাংলাদেশের আদালতে বিচার হওয়া উচিত।
এ সময় বাংলাদেশে ‘ভারত খেদাও’ প্রচারণার ব্যাপারে জি এম কাদের বলেন, এই বিদ্বেষ ভারতের বিরুদ্ধে নয়। বরং বাংলাদেশে একটি স্বৈরাচারী শাসনের সূচনা ও অপশাসনের অনেক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দেশটির একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল (আওয়ামী লীগ) ও তার নেত্রীর (শেখ হাসিনা) প্রতি ভারতের প্রশ্নাতীত সমর্থনের নীতির বিরুদ্ধে এই বিদ্বেষ।
৭৬ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশে বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করা ঠিক নয়। এটি একটি ভুল ভাষ্য। বন্যা বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য আপনি কীভাবে কাউকে দোষ দিতে পারেন? নিচু এলাকায় পানি প্রবাহিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা যে সমস্যা মোকাবিলা করছি, সেটি হচ্ছে ভারত থেকে পানি কম ছাড়া।
কিন্তু বর্ষাকালে যদি পানি না ছাড়া হয়, তাহলে সেখানে অবস্থিত বাঁধগুলো ভেঙে যেতে পারে। অনেক বড় আকারের বিপর্যয় ঘটাতে পারে। জি এম কাদের বলেন, ভারত থেকে আগাম সতর্কতা থাকলে ভালো হতো, যাতে আমরা প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পেতাম।
ভারত বাংলাদেশের ‘সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু’ হওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধির বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, ভারতবিরোধী মনোভাব ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে নয়, নীতিনির্ধারকদের বিরুদ্ধে। ক্ষোভ ভারতীয় জনগণের বিরুদ্ধে নয়, এখানে এখনো এমন মানুষ আছেন, যারা মানুষে মানুষে ভালো সম্পর্ক চান।
কিন্তু সমস্যা হলো ভারত আওয়ামী লীগকে তার সব ত্রুটিবিচ্যুতি, দুঃশাসন, সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাব ও দুর্নীতি সত্ত্বেও এতটাই সমর্থন করেছিল, ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টকে এখন আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর সেই কারণেই মানুষ ক্ষুব্ধ। সে জন্যই মানুষ ভারতকে বাংলাদেশের শত্রু হিসেবে দেখছে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। আমি মনে করি, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণ করা উচিত। এখানে তার বিচার করা উচিত। ভারতকে অবশ্যই তাকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে জি এম কাদের বলেন, উভয় দেশের একে অপরকে প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন একটি নতুন ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ এখন অতীত। আমাদের সামনে তাকাতে হবে। উভয় দেশকে বসতে হবে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের উপায় পুনর্বিবেচনা করতে হবে। যাহোক, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয়কে সমান হিসেবে বিবেচনা করা উচিত এবং ভারতকে যে কোনো ধরনের বড়ভাইসুলভ মনোভাব এড়ানো উচিত। কারও সর্বোচ্চ প্রভুর মতো আচরণ করা উচিত নয়।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, দেশের মানুষ যত দ্রুত সম্ভব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরতে চায়। এই মুহূর্তে, জনগণের অভ্যুত্থানের পরে, সাধারণ জনগণ একটি সঠিক গণতান্ত্রিক কাঠামো চায়।
কয়েক দশক ধরে জনগণের ভোটে সরকার গঠন করা হলেও সেসব সরকার কখনো জনগণের জন্য কাজ করেনি। কোনো একক রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির খুব শক্তিশালী হওয়া রুখতে শুধু সরকারি কাঠামোতেই নয়, সংবিধানেও সংস্কার আনার আহ্বান জানান জি এম কাদের।
অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল রোববার বাংলাদেশের জনগণকে ধৈর্য ধরার যে আবেদন জানিয়েছেন, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন জি এম কাদের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়নের পর একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এই সরকার। এ অবস্থায় রাতারাতি পাহাড়সমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন।
জি এম কাদের বলেন, আমি মনে করি তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) যে আবেদন জানিয়েছেন, যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা খুবই ইতিবাচক এবং এই সংস্কারগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, হওয়া উচিত।