21 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024

শিল্পীর কোনো ধর্ম-বর্ণ নেই, তারা সবার: অপু বিশ্বাস

নায়িকার বাইরেও বিভিন্ন সময়ে মানবিক পরিচয়
হাজির হতে দেখা যায় ঢালিউড কুইন খ্যাত জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে। এবার স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণ করছেন দেখলাম…

প্রথমেই যদি বলি, বন্যাদুর্গত এলাকায় যারা আছে, সেই মানুষদের জন্যই আমি আজকের অপু বিশ্বাস। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো বলে-কয়ে আসে না বা কারও হাত থাকে না কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আমার প্রাপ্তিটা তাদের জন্যই। যখন সুযোগ আসে সেই প্রাপ্তির সম্মান করা উচিত। আমি ত্রাণ বলি না এগুলো উপহারসামগ্রী, ভালোবাসা।

আমার কাছে মনে হয়, যে মানুষগুলোর কাছে আমরা ভালোবাসা পৌঁছে দিচ্ছি, সেই মানুষগুলো তা নেওয়ার মানুষ নন, তারা সবাই সচ্ছল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তারা তাদের থাকা-খাওয়া, বাসস্থান, পরিবার সবকিছু বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। সে জায়গা থেকে আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা যা দিচ্ছি, এটা আসলে ভালোবাসাসামগ্রী।

ব্যক্তিগতভাবে বলতে গেলে, আমি অপু বিশ্বাসের পেছনেও তাদের ভালোবাসা চাওয়া-পাওয়া আছে। তারা যদি হলে ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট না কাটতেন, তাহলে তো অপু বিশ্বাসের সিনেমাটা চলত না। সে জায়গা থেকে আমার ক্ষুদ্র ভালোবাসা তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

যেমনটা টিএসসিতে আমার লোক দিয়ে এসেছে। তাদের সঙ্গে আমি যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম, কিন্তু যেহেতু আমার নিজের সন্তান অনেক ছোট আর সবচেয়ে বড় কথা, ঢাকা শহরেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই সময়ে বাচ্চারা অসুস্থ হয়। সবকিছু মিলিয়েই আমি যাইনি। আমার পক্ষ থেকে প্রতিনিধিকে পাঠাচ্ছি এবং সাধ্যমতো উপহারসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

আরও পড়ুনঃ  বেনজীরকে দেশত্যাগে সাহায্য করায় শাহেদাসহ ১৭ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি

উপহারসামগ্রীতে কী কী দিচ্ছেন?

আপনারা জানেন যেদিন থেকে আমার সন্তান পৃথিবীতে এসেছে, সেদিন থেকে আমার নারীদের প্রতি বরাবরের মতো দুর্বলতা কাজ করে। এই সময়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে সবারই বিস্কুট-চানাচুর, পানি প্রয়োজন কিন্তু যারা বাচ্চা, যারা বুকের দুধ পান করে তারা ঠিকমতো তা খেতে পারবে না।

সে জায়গা থেকে ফিডার, বাচ্চাদের দুধ, বিশেষ করে নারীদের জন্য এই সময়ে প্যাডের প্রয়োজন হয়। এটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হয়তো লজ্জার খাতিরে আরেকজনের কাছে চাইতে পারে না। নারীদের চিন্তা করে এই কয়েকটা জিনিসে আমি ব্যক্তিগতভাবে ফোকাস দিয়েছি এবং পাঠিয়েছি।

এসব ভালোবাসার সামগ্রী কোন এলাকায় পাঠাচ্ছেন?

ফেসবুক বা অন্যত্র প্রচুর শুনতে পাচ্ছি মানুষ কুমিল্লা-ফেনীতে যাচ্ছে। কিন্তু আমি পাঠিয়েছি খাগড়াছড়িতে। আমার কোনো টিম নেই, যাদের সঙ্গে যুক্ত আছি তারা যাচ্ছে খাগড়াছড়ির দিকে।

তবে আমাদের ইমরান হাসুর (অভিনেতা) মাধ্যমে ফেনীতে, আরেকটা ফাউন্ডেশনে দিয়েছি তারা মনে হয় কুমিল্লার দিকে যাচ্ছে। পাশাপাশি টিএসসিতে আমি আমার প্রতিনিধির মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য পাঠিয়েছি। যেহেতু তাদের কাছে প্রচুর জামাকাপড় আছে, আমি মনে করি আর্থিক সহযোগিতা করলে ভালো হবে।

বন্যাকবলিত এলাকায় যাওয়ার কি কোনো ইচ্ছে আছে?

আসলে সত্যিই ইচ্ছে আছে, কীভাবে বলে প্রকাশ করব! বলতে খুব দুঃখ লাগে, আমাদের দেশে কেউ ছবি তোলে আবার কেউ ছবি বাণিজ্য করে। আমি মনে করি যারা বাণিজ্য করতে গেছে, এমন মেন্টালিটির মানুষের পরিচয় পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু আমি জানি আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন, কাউকে উপকার করলে যেন কেউ না দেখে। কিন্তু আপনি যখন সাধ্য অনুযায়ী উদ্যোগী হবেন, তখন অন্য পাঁচটা মানুষও কিন্তু আগ্রহী হবে যে না আমিও আসি।

আরও পড়ুনঃ  গণভবনের জিনিসপত্র ফেরত দিয়ে যাচ্ছেন অনেকে

আবার তার মধ্যে অনেকে এটাকে বাণিজ্য মনে করছে। সর্বোপরি আমি একটি কথাই বলতে চাই, প্রত্যেকটা মানুষের বিবেকের উন্মোচন হোক এবং বিবেকবান হোক। সব মানুষের কাছে আমার চাওয়া থাকবে সবাই যেন নিজের বিবেক-মনুষ্যত্বের জায়গা থেকে যুক্ত থাকে। সে ক্ষেত্রে যারা ছবি দিচ্ছেন, তাদের নেগেটিভলি বলার কিছু নেই। সবাইকে বলব, বিবেক ও মানবিকতার উদয় হোক।

শুধু এখন না, আপনি করোনাকালেও ছিলেন…

করোনাকালের কথা যদি বলি, ওই মুহূর্তে কেউই বের হচ্ছিলেন না। আমি যখন বের হয়েছিলাম, তখন কিন্তু কেউই ছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমাদের কাছে যদিও এক মাসের খাবার মজুদ আছে কিন্তু যাদের কাছে ১ দিনের খাবারও নেই, তাদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। আমার ডাকার মাধ্যমে যদি অনেক মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়, তাহলে আমি করলাম না হয় শোঅফ।

সিনেমা বা কাজ নিয়ে পরিকল্পনা কী?

আগস্ট মাসে বেশ কিছু কাজের প্ল্যানিং ছিল। সেগুলো স্থগিত করা হয়েছে। আর একটি কথা বলব, আমাদের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় নতুন একটি সূর্যোদয় হয়েছে। আর আমি আশা করব, চলচ্চিত্রও একটি প্রতিচ্ছবি হোক বাংলাদেশের। আমরা যে অভিনেতা-অভিনেত্রী, এটাও আমাদের এক প্রকার জব। এখান থেকেই আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে ভালো থাকি।

আরও পড়ুনঃ  আপনাদের কী হবে তা আমার পরিবারের চিন্তার বিষয় না: জয়

তাই আমি বলব, এই জায়গাটা একদম চুপ হয়ে গেছে। যারা বিজ্ঞ মানুষ আছেন, তারা অত্যন্ত গুণী এবং মেধাবী। তাদের বলব, চলচ্চিত্র অঙ্গনটা একদমই থমকে গেছে, এই জায়গাটাই যেন নজর দেন। আর আমরা যারা শিল্পী আছি, তারা একটা ফুল। এই বাগানটা যেন সুন্দরভাবে সুসজ্জিত হয়। কারণ, এটা আমাদের রুটি-রুজি, এটাই আমার কামনা থাকবে।

নতুন দেশ নিয়ে কী বলতে চান?

খুবই সুন্দর লাগছে। আমরা চলচ্চিত্রের মানুষ, আমরা আমাদের কাজ নিয়ে আছি। শিল্পীদের কোনো ধর্ম-বর্ণ থাকে না, তারা সবার। কারণ আমাদের ছবি, আমাদের কাজ সবার জন্য।

সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন কি?

বিগত দিনে যা হয়েছে, স্পেসিফিকলি যদি সেন্সর বোর্ডের কথা বলেন ওখানে অশ্লীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যে সিনিয়র শিল্পীরা আছেন, আমি মনে করি তাদের সেখানে প্রত্যাশা রয়েছে। তারা অত্যন্ত মেধাবী, গুণী এবং পরিপক্ব। সেন্সর বোর্ডটা সে রকমই হওয়া উচিত। এখন যেহেতু সবকিছুই অনেকটা ফেয়ার আমি আশা করব সব দিকেই যেন সবাই নজর দেয়। এখান থেকে যেন নতুন শিল্পীরা নতুন সূর্যোদয় দেখতে পায়।

আপনার মতামত লিখুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ